তুর পাহাড়ের সংলাপ
তুর পাহাড় ইতিহাসের এক উজ্জ্বল সাক্ষী। যে পাহাড়ে
স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কথা বলেছেন তাঁর বান্দার সাথে। এই
পর্বতটি মিশরের পবিত্র ভূমি সিনাই উপদ্বীপের সেন্ট ক্যাথেরিন শহরে অবস্থিত।
বেদুইনদের কাছে এটি জাবালে মুসা
(মুসার পর্বত) হিসেবেও পরিচিত। সিনাই পর্বতটির উচ্চতা ২২৮৫ মিটার।
কুরআন মাজিদে ৭ টি সূরায় ১০ বার
তুর পাহাড়ের কথা এসেছে।
০১. সূরা বাকারা- ৬৩, ৯৩, ১৫৪ নং আয়াত
০২. সূরা নিসা- ১৫৪
০৩. সূরা মরিয়াম- ৫২
০৪. সূরা ত্বহা- ৮০
০৫. সূরা কাসাস -২৯, ৪৬
০৬. সূরা তুর- ১
০৭. সূরা তীন- ২
মুসা আ. মাদায়েন থেকে যখন ফিরছিলেন:
অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ
করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর
পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা
অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে
তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসতে পারি অথবা কোন জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি,
যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ
দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, রাব্বুল আলামীন। ( সূরা
কাসাস-২৯-৩০)
অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌঁছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা, আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র
উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ। এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা
প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক। আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত
কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। কেয়ামত
অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে
প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে
না এবং নিজ খাহেশের অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে
নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হলে তুমি ধবংস হয়ে যাবে। ( সূরা ত্বহা: ১১-১৬)
আল্লাহর এক প্রশ্নে মুসা আ. এর চার জওয়াব:
আল্লাহ তা আলা:
মুসা তোমার ডানহাতে ওটা কি?
মুসা আ. – ১. এটা আমার লাঠি
২. আমি এর উপর ভর দেই
৩. মেষপালের জন্য বৃক্ষ থেকে পাতা ফেলি
৪. এটা দিয়ে আমি অন্যান্য কাজ ও করে থাকি
হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি? তিনি বললেনঃ এটা আমার লাঠি, আমি এর উপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজ ও চলে। ( সূরা ত্বহা: ১৭-১৮)
👉কথা যদি হয় নিজের রবের সাথে সেই অনুভূতি টা কেমন হয়!!!
আল্লাহু আকবার!!! স্রষ্টা কথা বলছেন তার সৃষ্টির সাথে। পৃথিবীতে এট ছিল ইউনিক। স্রষ্টা
তাঁর সৃষ্টির সাথে কোন মাধ্যমে কথা বলেছেন। সরাসরি কথা বলার দৃষ্টান্ত এটি ছাড়া দ্বিতীয়টি
নেই। এজন্যই মুসা আ. এর উপাধি কলিমুল্লহ।
আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর। অতঃপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল।আল্লাহ বললেনঃ তুমি তাকে ধর এবং ভয়
করো না, আমি এখনি একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব। তোমার হাত
বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক
নিদর্শন রূপে; কোন দোষ ছাড়াই। এটা এজন্যে যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু তোমাকে দেখাই। ( সূরা ত্বহা- ১৯-
২৩)
মহান আল্লাহর কাছে মুসা আ.এর ছয় প্রশ্ন:
০১. “মুসা আ. তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করেন: হে আমার রব! তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সবচেয়ে
(মুত্তাকি) আল্লাহ সচেতন?
জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন: যে সবসময় তার
রবকে স্মরণ রাখে, ভুলে যায় না।
০২. অতপর মুসা আ. জিজ্ঞেস করেন: তোমার
বান্দার মধ্যে কে সবচে হেদায়াতপ্রাপ্ত? আল্লাহ
তায়ালা উত্তরে বলেন: যে বান্দা হেদায়াতের (কুরআন ও সুন্নাহর) অনুসরণ করে।
০৩. মুসা আ. পুনারায় জিজ্ঞেস করেন: তোমার
বান্দাদের মধ্যে কে সবচে ন্যায়বান বিচারক?
আল্লাহ তায়ালা জবাবে বলেন: যে ব্যক্তি
মানুষের মাঝে ঠিক তাই বিচার-ফায়সালা করে, যেটা
সে তার নিজের জন্যে পছন্দ করে।
০৪. অতপর মুসা আ. জিজ্ঞেস করেন: তোমার
বান্দাদের মধ্যে কে অধিক জ্ঞানী?
আল্লাহ তায়ালা উত্তর দেন: যে ব্যক্তি
জ্ঞানার্জনে কখনোই পরিতৃপ্ত হয়না এবং মানুষের সমস্ত জ্ঞানকে নিজের কাছে একত্রিত করার
পিপাসায় থাকে।
০৫. পুনরায় মুসা আ. জিজ্ঞেস করেন: তোমার
বান্দার মধ্যে কে অধিক সম্মানিত?
জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন: যে ব্যক্তি
প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অপরকে ক্ষমা করে দেয়।
০৬. অতপর মুসা আ. জিজ্ঞেস করেন: তোমার
বান্দাদের মধ্যে কে সবচে ধনী?
আল্লাহ তায়ালা জবাবে বলেন: যে ব্যক্তি
পরিতৃপ্ত থাকে তাতে- যা তাকে দেয়া হয়।”
(সূত্র: বাইহাকি)
0 Comments