বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রারম্ভিক কথা-
মানবাধিকার বলতে বুঝায় মৌলিক অধিকার। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যে অধিকার গুলো মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক তাই মানবাধিকার। মানবাধিকার শব্দটি বর্তমানে বেশ প্রচলিত হলেও ইসলামে মানবাধিকার ইসলামের আবির্ভাব থেকে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মানবাতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হলেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার রোল মডেল। তার আগমনকালে বিশবমানবতার অবস্থা ছিল চরম ভুলন্ঠিত। মানুষের উপর মানুষের দাসত্ব, প্রভুত্বের এক ভয়াল চিত্র। মানবজাতির ত্রাণকর্তা মহানবী(সঃ) তার বৈপ্লবিক আদর্শ ইসলামের মাধ্যমে মানুষ কে মানুষের গোলামির বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। মাত্র ৬৩ বছর জিন্দেগীতে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যেটি সর্বকালের সেরা সমাজ ব্যবস্থা। পৃথিবীর মানুষ অবাক দৃষ্টিতে দেখেছিল সেই সমাজ।
![]() |
মানবাধিকার কি? :
মৌলিক অধিকার হলো সেই সকল প্রাকৃতিক অধিকার এবং মানবাধিকার যে অংশগুলো কোন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তার দেশের নাগরিক হয়ে ভোগ করে থাকে এবং যেগুলো নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু ও বিষয় তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা পাওয়ার অধিকার এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার। এসব অধিকার মহান আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে দিয়েছেন। তাই সব মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে থাকে। মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণা করে ১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বর। অথচ মুহাম্মদ (সঃ) আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। মানবাধিকার প্রসঙ্গটিতে রাসূল (সা:) তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন। ব্যক্তি উদ্বুদ্ধকরণ ও নিশ্চিতকরণ , আইনী ব্যবস্থায় অধিকার সংরক্ষণ, ভবিষ্যতে আল্লাহ পাকের নিকট জবাবদিহিতা প্রদান।
নবুয়ত পূর্ববর্তী মানবাধিকার কার্যক্রম:
মহানবী (সঃ) এর পুরো জীবন ছিল মানবাতার কল্যাণে। তার নবুয়তের পূর্বের জীবন ও আমাদের জন্য অনুকরণীয়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ তিনি শৈশব থেকে নিজের পরিবার থেকে শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল, উদ্যমী মানুষ।
১। শৈশব কালে রাসুল (সঃ) এর মানবিক কার্যক্রম –
একজন মানুষের প্রতি তার পরিবারের সদস্যগন যেই সাহায্য দাবী করে তাও মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সঃ) শৈশবে ৬ বছর পর্যন্ত ধাত্রীগৃহ হালিমা (র) এর বাড়িতে ছিলেন। সেখানে তিনি তাদের সাথে কাজ করতেন। গবাদি পশু দেখাশুনা, পানি সরবরাহ তাঁবু টাঙ্গানো, বাড়িতে আগত মেহমানদের আপ্যায়ন প্রভৃতি কাজ তিনি করতেন। এই কাজগুলুকে তিনি তাঁর দায়িত্ব মনে করতেন।
২।বালক মুহাম্মদ (সঃ) এর মানবিক কার্যক্রম-
রাসুল (সঃ) এর বয়স যখন ১২ তখন পরিবার কে সহযোগিতা করার জন্য তিনি তাঁর চাচার সাথে ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়া গমন করেন।
৩। হিলফুলফুজুলে যোগদান
রাসুল (সঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার কার্যক্রম হল “হিলফুলফুজুলে” যোগদান।
হিলফুল অর্থ কল্যান,শান্তি। আর ফুজুল অর্থ সংস্থা, সংগঠন। হিলফুলফুজুল অর্থ শান্তি সংঘ।
রাসুল (সঃ) এর বয়স যখন ২০ বছর, ৫৯১ সালে তিনি হিলফুলফুজুলে যোগদান করেন। রাসুলের চাচা যুবাইর ইবনে আব্দুল মোত্তালেব ছিলেন এর উদ্যোক্তা। মুলত ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা ও আস বিন ওয়ায়েল করতিক ইয়ামেনী ব্যাবসায়ির পাওনা না পরিষদ এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে হিলফুলফুজুল গঠনের উদ্যেগ নেয়া হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে জুদিয়ানের গৃহে রাসুল (সঃ) তাঁর চাচা যুবাইর (র) এবং আর ২ জন মিলে সবাই কত্রিত হয়ে হিলফুলফুজুল গঠন করেন। রাসুল (সঃ) এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এখানে ৫টি ঘোষণাপত্র ছিল
১। মক্কা থেকে অশান্তি দূর করা।
২। পথিকের জানমাল রক্ষা করা।
৩। মজলুমদের সাহায্য করা।
৪। দরিদ্রদের সাহায্য করা।
৫। কোন অত্যাচারীকে মক্কায় আশ্রয় না দেয়া।
বনু হাশিম, বনু জুহরা, বনু আসাদ, বনু তাইম গোত্রের সবাই হিলফুলফুজুলের সাথে একাতœতা পোষণ করে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এটি ছিল একটি মাইলফলক। রাসুল (সঃ) তাঁর জীবনে এসে এই সংগঠনের কথা বলেন। কেউ যদি আমাকে ১০০০ লাল উট দেয় তবুও আমি সেদিনের ( হিলফুলফুজুলের নীতিমালা) অবস্থার পরিবর্তন করবনা।
আলী (র) ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহন
আবু তালিবের সংসারে কিছুটা টানাপোরান দেখে তিনি আলী (র) কে নিজের সাথে নিয়ে আসেন। এই সকল কার্যাবলী থেকে বুঝা যায় রাসুল (সঃ) মানবাধিকারের বিষয়ে কতটুকু সচেতন ছিলেন।
নবুয়ত পরবর্তী মানবাধিকার কার্যক্রম :
৪০ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়তের মর্যাদা পান। আল্লাহর বার্তাবাহক হিসেবে পৃথিবীর মানুষের অধিকার, কল্যানের পথ ও পাথেয় নিয়ে আসেন। রাসুল (সঃ) বলেন যে অধিকার ২ প্রকার। এক হচ্ছে হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর অধিকার, দুই হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের অধিকার। রাসুল (সঃ) ২ভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্টার ভূমিকা রাখেন। এক নৈতিকভাবে, দুই আইনগতভাবে।
কালিমার দাওয়াত :
কালিমার দাওয়াত হচ্ছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার রক্ষাকবচ। কোন ব্যাক্তি যদি এই বিপ্লবী ঘোষণা দিয়ে তা অনুসরন করে তাহলে সে একজন মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। কারন এই কালিমা জীবনের সকল দিকের মুলনীতি। রাসুল (সঃ) সর্বপ্রথম “ লা ইলা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর দাওয়াত দেন। এই কালিমা তাঁর স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য এবং স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি রহমশীল করে তোলে।
ব্যবসায়ীর অধিকার প্রতিষ্ঠা:
রাসুল (সঃ) সকল মানুষের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। মক্কায় একবার আবু জেহেল এক ব্যক্তি থেকে উট ক্রয় করে তাঁর টাকা দিতে অস্বীকার করে। ঐ ব্যক্তি মক্কার পথে চিৎকার করতে থাকে তাঁর টাকার জন্য। মুশরিকরা ঠাট্টার চলে বলে মুহাম্মদ কে বল সে তোমার টাকা উদ্ধার করে দেবে। সে ব্যক্তি মুহাম্মদ(স) কে বললে রাসুল (সঃ) সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী কে নিয়ে আবু জেহেলের বাড়ীতে যায়। তাঁকে বলে এই ব্যক্তি তোমার কাছে টাকা পাবে তা দিয়ে দাও। সঙ্গে সঙ্গে আবু জেহেল তাঁর টাকা দিয়ে দেয়। এই ঘটনা মানবাধিকারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত ।
আকাবার শপথে মানবাধিকার:
নবুয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদীনার ১৩ জন লোকদের নিয়ে তিনি যে শপথ করান তা আকাবার প্রথম বাইয়াত নামে পরিচিত। এটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এই শপথের ৬টি বিষয়ের মধ্যে ৪টি ছিল মানবাধিকার বিষয়ক।
১। চুরি না করা। ২। যিনা না করা। ৩। নিজের সন্তান কে হত্যা না করা। ৪। কারো উপর মনগড়া অপবাদ না দেয়া।
মদীনা সনদ :
মদীনা সনদ হল মানবাধিকারের অন্যতম দলিল।মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের কনসেপ্ট তা আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বের গঠিত মদিনা সনদেরই প্রতিচ্ছবি। ৬২১ খ্রীস্টাব্দে মদীনা ও এর আশেপাশের এলাকা নিয়ে যে ছোট্ট রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছিল তার প্রসিডেন্ট ছিলেন রাসুল (সঃ)। সেখানে মুসলমান ছাড়াও আর ভিন্ন ধর্মালম্বী ছিল। তাদের সকলের অধিকার নিশ্চিত করা হয় মদীনা সনদের মাধ্যমে। এই সনদে ৪৭টি ধারা ছিল। এই সনদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হল-
১।মদীনার সকল কে “একটি জাতি” বলেছেন।
২।সবধরনের হানাহানি নিষিদ্ধ করেছেন।
৩।স্থানীয় জনগণকে নিরাপত্তা দান।
৪।সকলে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে চর্চা করতে পারবে।
৫।মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদের ভরণপোষণ এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরন।
এটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এক উজ্জ্বল পদক্ষেপ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত কোন সংবিধান। একে “ম্যাগনা কার্টা’’ বলা হয়।
এই প্রসঙ্গে মারগারেট হুইটলি বলেছেন “ চিরাচারিত নেতারা নজর দেন ভূমিকা আর দায়িত্বের উপর। নতুন নেতারা মানবিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন, যেটা হয়ে উঠে সাফল্যের আসল শক্তি।’’
ব্যক্তিগত অধিকার প্রতিষ্ঠা:
মহানবী (সঃ) ব্যাক্তির অধিকারের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন এবং এর নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। এক মুসলমানের উপর অপর ব্যাক্তির ৬টি অধিকার বলেছেন। এক মুসলিম অপরকে দেখলে তাঁকে সালাম দেয়া বা তাঁর কল্যাণ কামনা কে তিনি বিশেষ জোর দিয়েছেন। এক ব্যাক্তির সম্পদ অপর ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে দখল করা হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন কেউ অন্যায়ভাবে কার ১বিগত জায়গা দখল করলে কিয়ামতের দিন সাত তবক জায়গা তাঁর গলায় সে বহন করবে।
প্রতিটি ব্যাক্তির তার গোপনীয়তা, সম্মান, খ্যাতি, এবং নিজ অবস্থান রক্ষার অধিকার আছে। একটি রুচি সম্পন্ন, সুন্দর সুশৃক্মখল জীবনের জন্য গোপনীয়তা অপরিহার্য এবং মূল্যবানও বটে। গৃহ কর্তীর অনুমতি ব্যতিরেকে গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ ইসলাম অনুমোদন করে না। শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখা এবং অপবাদ ও অপমান থেকে প্রতিরোধে মানুষের গোপনীয়তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক মানবিক অধিকার। মহানবী (সা.) এর আদর্শ হল এক জন মুসলমানের অনুচিত অন্য কারো অন্তরানুভূতিতে আঘাত হানা এবং অপবাদ দেয়া, বিদ্রূপ করা, গীবত করা, বিকৃতনামে ডাকা ছিদ্রান্বেষণ করা ও অন্যকে কষ্ট দেয়া। প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নীতির অনুকরণে পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বজনীন অধিকার ঘোষণার প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেন: ‘জাতিসমূহের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য’’ ।
মত প্রকাশের অধিকার:
মত প্রকাশ করা একজন মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আল্লাহ মানুষ কে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর অভিব্যাক্তি প্রকাশ করার জন্য। রাসুল (সঃ) সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ধনী, গরীব, কাল, ফর্সা, নারী, পুরুষ, সকলের মত প্রকাশ রাসুলের যুগে উন্মুক্ত ছিল। বর্তমান বিশ্বে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে লংগীত। ক্ষমতাসীনদের মতের বিপরীত হলে নেমে আসে নির্যাতনের স্টীম রোলার। কিন্ত রাসুল (সঃ) কোন মানুষ কে তাঁর মতের বিরুদ্ধে বাধ্য করেননি।
নিরাপত্তার অধিকার :
প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে নিরাপত্তার সাথে বসবাসের দাবি রাখে। রাসুল (সঃ) তাঁর রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিক কে নিরাপত্তা দিয়েছেন। আলাদা বাহিনী গঠন করে রাত্রিবেলা টহল ব্যবস্থা করেছেন। কোন মানুষ কে হয়রানি, গ্রেপ্তার, আঘাত করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত ছিলেন। আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলেন- ‘যে ব্যক্তি হত্যার অপরাধ কিংবা দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া অপর ব্যক্তিকে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো। আর কেউ যদি কারো প্রাণ বাঁচিয়ে রাখলো সে যেন গোটা মানব জাতিকে বাঁচিয়ে রাখলো।’ - মায়েদা-৩২ । রাসুল (সঃ) এটি বাস্তবে প্রয়োগ করেন। জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দানে তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন।
এক্ষেত্রে কোনো গোত্র, সম্প্রদায় কিংবা জাতিভেদ করা হয়নি। আর এভাবেই তিনি মানুষের মানবিক অধিকারকে নিশ্চিত করেছেন। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিকদের ক্ষেত্রেও কেসাস-এর আইন (হত্যার বদলে হত্যা) সমভাবে প্রযোজ্য হয়েছে। রাসূলে করীম (স.)-র সময়কালে একজন মুসলিম নাগরিক জনৈক অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করলে নবী করিম (সা.) হত্যাকারী মুসলিম ব্যক্তিকে যথারীতি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
নারীর অধিকার:
তখনকার সময় নারিরা ছিল ভোগ্য পন্য, তাদের কোন অধিকার ছিলনা, কন্যা সন্তান কে জীবন্ত কবর দিত। রাসুল (সঃ) নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন –মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- পৃথিবীর কোন সমাজ এর পূর্বে নারীদের এই মর্যাদা দেয়নি। নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার দিয়েছেন। নারীরা পিতার এবং স্বামী উভয় পক্ষ থেকে সম্পত্তি পাবে। তিনি কন্যা সন্তান কে রহমত বলেছেন। তিন কন্যা সন্তান পালন কে আর বেশী উৎসাহিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন: ‘(পুরুষদের জন্যে) দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে উত্তম স্ত্রী।’ । এক ব্যক্তি নবী (সঃ) কে প্রশ্ন করে মানুষের মধ্যে কে আমার কাছে সর্বোত্তম সম্মান, মর্যাদা ও সদ্ব্যবহার পাবার যোগ্য? রাসুল (সঃ) বলেন তোমার মা,তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী আবারো জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বাবা।
নারীর মর্যাদা রক্ষায় বিশেষ নীতিমালাও ঘোষণা করা হয়েছে। মায়ের অবাধ্যতা সন্তানের জন্য হারাম করে দিয়ে মাতৃ জাতির স্থানকে অতি উচ্চে তুলে দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) ‘সেই লোক উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম এই ঘোষণা দিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
রাসুল (সঃ) নারিদের কে ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, আইনগত, রাষ্ট্রীয় সকল দিকদিয়ে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন।
নারীর নিরাপত্তায় হিজাবের ব্যবস্থা কার্যকর করেন। নারীদের কঠিন কাজ থেকে দূরে রাখেন। যেমন- পাথর খনীতে কাজ, ভারী কাজ যা নারীর শারিরীক ক্ষতিসাধন করবে এমন কাজ নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করেন।
পবিত্র কুরআন মজিদ সেই কবে ঘোষণা করে দিয়েছে, ‘নারীদের উপর পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের ওপরেও নারীদের ন্যয়সঙ্গত অধিকার রয়েছে।’ (আল বাকারা-২২৮)। রাসুল (সঃ) কুরআনের আদেশের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর রাষ্ট্রে।
দাস প্রথা বিলুপ্তকরন:
পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ কে আল্লাহ তাআলা স্বাধীন করে পাঠিয়েছেন। কিন্ত মানুষ মানুষের উপর প্রভুত্ব, দাসত্ব তৈরি করেছে। আজো চলছে এই দাসত্ব তবে এর রুপ আকার হয়ত পরিবর্তন হয়েছে। রাসুল (সঃ) দাস প্রথা বিলুপ্ত করেন। তিনি তাঁর দাস যেদ বিন হারেসা কে মুক্তি দিয়ে নিজের পুত্রের মর্যাদা দান করেন। বিলাল (র) কে মুয়াজ্জিনের মত সম্মানিত জায়গায় স্থান দেন। সালমান ফারসী (র) কে নিজের পরিবারের সদস্য বলেছেন। উনারা প্রত্যেকে দাস ছিল রাসুল (সঃ) নিজে অথবা সাহাবীদের মাধ্যমে তাদের কে মুক্তি করে মর্যাদা দান করেন। তিনি নিজে ৬৩ জন দাস মুক্ত করেন। আয়েশা (র) ৬৭ জন দাস মুক্ত করেন। আবু বকর (র) অসংখ্য দাস মুক্ত করেন। রাসুল (সঃ) বলেছে কিয়ামতের দিন স্বাধীন মানুষ কে বিক্রিকারী ব্যাক্তি কঠিন শাস্তির মুখোমুখী হবে।
ন্যায়বিচারের অধিকার:
মহানবী (সা.) পবিত্র কুরআনের নির্দেশের আলোকে মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। ঘোষণা দিলেন, ‘কোন অনারবের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং কোনো আরবের উপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ তিনি নিজে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে গিয়ে একজন মুসলমান ও একজন ইহুদির মধ্যে বিবাদের মামলায় ইহুদির পক্ষে রায় ঘোষণা করেন।
একজন নামকরা বংশের মহিলা চুরির দায়ে ধরা পড়লে বিধি অনুযায়ী তার হাত কাটার নির্দেশ দেয়া হয়। মহিলাটি একটি প্রভাবশালী গোত্রের হওয়ায় তার দণ্ড হ্রাসের তদবির করা হয়। কিন্তু মহানবী (সা.) দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, তার নিজের কন্যা ফাতিমাও যদি একই অপরাধে দোষী হতো তবে তাকেও একই দণ্ড দেয়া হতো। এই ঐতিহাসিক ঘোষণা মানুষের ভেতরে ন্যায় বিচারের ধারাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বিচারকদের ন্যায়বিচারের কথা বলেছেন। তিনি বলেন বিচারক ৩প্রকার এর মধ্যে ২প্রকার জাহান্নামী কারন তারা মিথ্যা ও উভয়পক্ষের কথা না শুনে রায় দিয়েছে। আর শ্রেষ্ঠ বিচারক হচ্ছে যে উভয়পক্ষের কথা শুনে সঠিক রায় প্রদান করে। এসব ক্ষেত্রে মহানবী শুধু মৌখিক নীতিমালা ঘোষণা করেই শেষ করেননি, নিজ জীবদ্দশায় বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।
মা-বাবার অধিকার:
রাসুল (সঃ) বলেছেন মা-বাবাই তোমার জান্নাত আবার মা বাবাই জাহান্নাম। তাদের সাথে কোমল ব্যবহার করা, তাদের সেবা করা, তাদের কথা শুনা ফরজ করা হয়েছে। অথচ আজ অনেক মা বাবা কে বৃদ্ধাশ্রমে দেখা যায়। পিতা মাতাকে উহ শব্দ পর্যন্ত না বলতে বলা হয়েছে কুরআনে দুনিয়ায় সন্তানদের কে পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে বলা হয়েছে- ( বনী ইসরাইল২৩-২৪)। রাসুল (সঃ) বলেছেন যে ব্যাক্তি তাঁর পিতা মাতা দুজন বা একজন কে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্ত তাদের সেবা করে সন্তুষ্ট অর্জন করে জান্নাতে যেতে পারলনা তাঁর জন্য ধ্বংস।
সন্তান-সন্ততির অধিকার:
সন্তান কে সঠিকভাবে লালন পালন করা মা বাবার অপরিহার্য কর্তব্য। এটি সন্তানের মৌলিক অধিকার। ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য এটি সমান। সন্তানের সুন্দর নাম রাখা, তাঁর আকিকা দেয়া, তাঁকে সঠিক শিক্ষা দেয়া, সন্তানের ভরণপোষণ আদায় করা মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সঃ) এই বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। রাসুল (সঃ) বলেছেন পিতা মাতার প্রতি সন্তানের হক ৩ টি জন্মের পর ভাল নাম রাখা, বুদ্ধি জ্ঞান হলে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া, পূর্ণ বয়স্ক হলে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করা।
নিকটাত্নীয় ও প্রতেবেশীর অধিকার:
মহানবী (সঃ) বলেছেন নিকাতœীয়ের হকের ব্যাপারে কিয়ামতে জিজ্ঞাসা করা হবে। আতœীয়ের বন্ধ ছিন্নকারী জান্নাতে যাবেনা। কেই যদি চাই তাঁর রিযিক ও হায়াত বৃদ্ধি পাক সে যেন নিকটাত্মীয়ের সাথে ভাল ব্যবহার করে। আর ঐ ব্যক্তি মুসলিম নযার হাত থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। তিনি তরকারিতে জোল বারিয়ে দিতে বলেছেন প্রতিবেশি কে দেয়ার জন্য। ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় আর তাঁর প্রতেবেশী অনাহারে থাকে।
শিশু ও বৃদ্ধদের অধিকার:
রাসুল (স) বলেছেন যে শিশুদের স্নেহ করেনা এবং বৃদ্ধদের সম্মান করেনা সে আমার উম্মত নয়। মৌসুমের প্রথম ফলটি রাসুল (সঃ) বাচ্চাদের খেতে দিতেন।
গরীব ও দুঃস্থ ও ইয়াতীমের অধীকার:
যারা নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন নিজেরা মিটাতে পারেনা তাদের প্রয়োজন পূরণে রাসুল (সঃ) বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। গরীব ও দুঃস্থদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত যাকাত ও ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়া তিনি ফিতরা ব্যবাস্থা চালু করেন। ক্ষুধার্ত কে খাবার দেয়া, বস্ত্রহীন কে বস্ত্র দেয়া, অসুস্থ কে সেবা করা একটি সার্বজনীন অধিকার। রাসুল (সঃ) এই বিষয়ে বলেন দুনিয়ায় এই সকল অভাবীদের প্রয়োজন পূরণ না করলে কিয়ামতে কঠিন জবাবদিহিতার মুখোমুখী হতে হবে। ধনী ব্যক্তিদের কে গরীব-মিসকিনদের দান করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মানুষের প্রয়োজন পূরণ করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণ করবেন।
রাসুল (সঃ) ইয়াতীমের অভিবাবকদের অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। ইয়াতীমের সম্পদ সংরক্ষনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন।মসজিদে নববীর জায়গা তিনি দুজন ইয়াতীম বালক আমরের দুই ছেলে সাহল সুহাইলের থেকে ১০ দিরহাম দিয়ে কিনে নেন। তৎকালীন সময়ে ইয়াতীমদের সবাই বঞ্চিত করত, তাদের ন্যায্য অধিকার দিতনা। রাসুল (সঃ) ইয়াতীমের অধিকার নিশ্চিত করেন।
শিক্ষার অধিকার:
রাসুল (সঃ) শিক্ষা সম্পর্কে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ বলেছেন। এটি মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। কারন অজ্ঞতা মানবজাতির অন্যতম শত্রু। রাসুল (সঃ) দারুল মক্কায় আরকামে আর মদীনায় মসজিদে নববীতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতেন। বদর যুদ্ধের বন্দীদের কে মুক্তি পন হিসেবে মদীনার ১০ জন ছেলেমেয়ে কে লেখাপড়া শেখানো শর্ত দিয়েছেন।
সমতা প্রতিষ্ঠা:
মহানবী (সঃ) পৃথিবীতে সমতা প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর নিকট ধনী, গরীব, কালো, ফর্সা, আরব অনারব, সকলে সমান পাত্র ছিল। আল্লাহ সূরা হুজুরাতের ১৪ নং আয়াতে বলেন মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট উত্তম হওয়ার মাফকাঠি হল তাকওয়া। কুরআনে আর বলা হয়েছে –আল্লাহ ন্যায় ও ইন্সাফের আদেশ করেছেন তোমাদের। রাসুল (সঃ) তাঁর সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছাড়া আর কোন মাফকাঠি নেই। রাসুল (সঃ) এর সমতা বিধান আজও পৃথিবীতে অদ্বিতীয়।
বন্দীদের অধিকার:
ইসলামে অপরাধের নির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে। বন্দীদের ও অধিকার আছে। রাসুল (সঃ) বদর যুদ্ধের বন্দীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বন্দীদের কে রুটি খেতে দিতেন। তখন আরবে রুটি ছিল উৎকৃষ্ট খাবার। বন্দিদের আতœপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেন। অপরাধ প্রমাণিত না হলে বন্দীদের শাস্তি দিতেন না।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অধিকার:
রাসুল (সঃ) তাঁর সময়ে সকল ধর্মের লোকদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তাঁর রাষ্ট্রে ইহুদী, খ্রিস্টান, অন্যান্য অমুসলিমগন বসবাস করত। তাদের কে তিনি ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করতেননা বা তাদের ধর্ম পালনে বাধা দিতেননা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সবাই তাদের কার্যক্রম চালাত। রাসুল (সঃ) তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে মানবাধিকার:
আজকের ভয়াল পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত শিশু, মহিল, বৃদ্ধ, নির্যাতন চরম আকার ধারন করেছে। অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে দিন দিন অসহনীয় হয়ে পরেছে। মজলুমের আতœনাদে আকাশ বাতাস বারী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ইরাক, আফগানিস্তান। ইয়ামেন, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়া, সকল দেশে মানবাধিকার শুধু লঙ্গন নয় মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।
রাসুল (সঃ) যুদ্ধ করেছেন মুলত মানুষ কে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য। তিনি জাহিলি যুগের যুদ্ধ নীতি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেন। জাহিলিয়াতের যুদ্ধ হত লুটতরাজ, হত্যা, ধ্বংস, বাড়াবাড়ি, মহিলার সম্মান নষ্ট করা, শিশু ও বৃদ্ধদের সাথে নিষ্ঠুর আচরন, খেত-খামার নষ্ট করা। রাসুল (সঃ) এই সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ করে দেন। রাসুলসের যুদ্ধের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন কোন মহিলা কে, কৃষক কে, সাধারন জনগন কে, দুর্বল মানুষ কে হত্যা করা যাবেনা। খেত খামার ফসলের ক্ষতি করা যাবেনা, অগ্নিসংযোগ করা যাবেনা। তিনি কোন যুদ্ধে গেলে সকালের আগে যুদ্ধ আরম্ভ করতেননা।
বিদায় হজ্বের ভাষণে মানবাধিকারের অন্যতম দলিল:
রাসুল (সঃ) দশম হিজরীতে যে হজ্ব পালন করেছেন তা ইতিহাসে বিদায় হজ্ব নামে পরিচিত। সেখানে আরাফাতের ময়দানে তিনি যে ভাষন দিয়েছেন তা মানবাধিকারের এক ঐতিহাসিক দলীল।
তিনি বলেন- হে মানুষ তোমাদের রক্ত অর্থাৎ একে অপর কে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। একে অপরের সম্পদ দখল করা সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা কালিমার মাধ্যমে তাদের হালাল করেছ, তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে নারীরা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে আনবেনা যাদের তোমরা অপছন্দ কর। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে তোমরা তাদের ভালভাবে পানাহার করাবে ও পোশাক দিবে।
এরপর রাসুল (সঃ) আর কিছু নৈতিক আদেশ দেন। তিনি বলেন আমি তোমাদের জন্য ২টি জিনিস রেখে যাচ্ছি এদুটি অনুসরন করলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবেনা। ১। আল কোরআন। ২। আল হাদীস।
শেষ কথা:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন একজন অকৃত্রিম মানবতার বন্ধু। জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আল কুরআনে সূরা আহযবের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘‘ তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। রাসুল (সঃ) ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিটি জায়গায় একজন মানুষের কি কি অধিকার তা শুধু তাত্ত্বিকভাবে নয় বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আজকের পৃথিবী রাসুলের আদর্শকে অনুসরন করলে মানবাধিকার আবার প্রতিষ্ঠা হবে। বাট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন পৃথিবীর শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে Go back to the universal book, and back to the universal prophet (Muhammad PBH)’’.. অর্থাৎ কুরআন ও রাসুলের কাছে ফিরে যেতে হবে।
0 Comments